রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল কমিউনিটির সদস্য সরদার হাসান ইলিয়াছ তানিমের উপর ২০১১ সালে ১৪ আগস্ট ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা মো. তারেক নুর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মুসতাক আহমেদসহ তৎকালীন ছাত্রলীগের ৯ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল (২ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার বাদী হয়ে রাজশাহী কোর্টে মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগীর ছোটভাই মো. রোকনুজ্জামান (২৬)।
আজ মোঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল অডিটোরিয়ামে মামলা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।
মামলায় অন্যান্য আসামীরা হলেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের তৎকালীন রাবি শাখার সভাপতি ও সদ্য বিলুপ্ত হওয়া নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী ওরফে আহম্মদ আলী মোল্লা (৪২), তৎকালীন রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবু হোসাইন ওরফে আবু হোসাইন বিপু (৩৭), তৎকালীন মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও বর্তমান তেজগাঁও শিল্প অঞ্চল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (বিপি নম্বর – ৮৫১৩১৪৭৮৫৯) রুহুল আমিন বাবু (৩৮), তৎকালীন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আল আরাফাত রাব্বি (৩৪), তৎকালীন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও রাবির ২০০৩-২০০৪ সেশনের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম (৩৫) ও রাস্ট্র বিজ্ঞান ২০০৭-২০০৮ সেশনের কামাল হোসেন (৩৫)।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সরদার হাসান ইলিয়াছ তানিম ২০০৮-০৯ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা থানার দক্ষিণ কুলিয়া গ্রামের আব্দুল কাদের’র পুত্র। আহত হওয়ার সময় তিনি রাজশাহী স্থানীয় দৈনিক লাল গোলাপের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন। একইসাথে তিনি দৈনিক সংগ্রামের বিশ্ববদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাদী মো. রোকন উজ্জামান বলেন, ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট আনুমানিক দুপুর ২টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের স্টোর রুম থেকে ককটেল উদ্ধারের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে আমার বড় ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ তার উপর বর্বরোচিত আক্রমণ করে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সে সময় আসামি রুহুল আমিন বাবু (বর্তমান পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর) হকিস্টিক দিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। পরে ইট দিয়ে তার মাথা ও মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত করে এবং আমীর আলী হলের সামনে থাকা পানির কুয়ার মধ্যে ফেলে চুবিয়ে তাকে ধরে রাখে। ওই সময় পানি থেকে উঠিয়ে আসামি আব্দুল আলীম, আল আরাফাত রাব্বি ও আহম্মদ আলী মোল্লা জিআই পাইপ এবং আবু হোসাইন বিপু রড দিয়ে ভুক্তভোগীর পিঠে, কোমরে ও পায়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এসময় ভুক্তভোগীর পকেটে থাকা মোবাইল ফোন (নোকিয়া-৫১৩০ মডেল) আসামি কামাল হোসেন ও হাতে থাকা ক্যামেরা (ক্যানন ৫৫০ ডি.) আহম্মদ আলী মোল্লা ছিনিয়ে নেয়।
এজাহার সূত্রে আরোও জানা যায়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর (পরবর্তীতে উপ উপাচার্য) চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহকারী প্রক্টর তারেক নূর ও সাবেক সহকারী প্রক্টর মুস্তাক আহমেদ। এসময় সাংবাদিক তানিম তাদের নিকট বারবার ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্যাতন থেকে রক্ষা করার জন্য আকুতি মিনতি করলেও তারা কোনো প্রকার সাহায্য করেননি বরং উল্টো ভুক্তভোগীর উপর হামলা করার জন্য নির্দেশ দেয়। তাদের মৌন সম্মতি পেয়ে দ্বিতীয়বার রড ও হকিস্টিক দিয়ে সাংবাদিক তানিমকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে এলোপাথারী আঘাত করতে থাকে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে মৃত ভেবে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সহকর্মী সাংবাদিকরা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ০৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
সংবাদ সম্মেলনে বাদী রোকনউজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন দেশে আইনের শাসন না থাকায় মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে। আমি মহামান্য আদালত এর নিকট আমার ভাইয়াকে হত্যাচেষ্টাকারী উক্ত আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি। একই সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনুস সহ সকল সকলের উপদেষ্টাবৃন্দ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নাগরিকদের উক্ত মামলার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করার অনুরোধ করছি।
উল্লেখ্য রাজশাহী জেলা বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মতিহার থানা আমলি আদালতের মামলা নাম্বার সিআর ২১১/২০২৪ (মতিহার)। কোর্ট মামলাটি আমলে নিয়ে ৭ জানুয়ারি ২০২৫ এর মধ্যে মতিহার থানার ওসিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।