গাজীপুর কালিয়াকৈর প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বন্ধ হওয়া একটি পোশাক কারখানার এক মাসের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিটের (চাকরি ছাড়ার পর আনুষঙ্গিক আর্থিক সুবিধা) টাকা না পেয়ে কারখানার উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) পেটানোর অভিযোগ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ওই কারখানা পরিদর্শেন করেন শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
ওই ঘটনায় কালিয়াকৈর উপজেলার মাহমুদ জিনস ও মাহমুদ ডেনিম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচলক রাফি মাহমুদ বাদি হয়ে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের করা হলে রাতেই অভিযান চালায় পুলিশ।
শ্রমিকদের মারধরে আহত রাফি মাহমুদ কালিয়াকৈর উপজেলার মাহমুদ জিনস ও মাহমুদ ডেনিম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচলক।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নওগার পত্নীতলা উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে নয়ন বাবু (৩৫) ও কাজল হোসেন (৩২), কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে রাজিব মিয়া (৪২) সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার নাটোয়ার পাড়া গ্রামের আব্দুল সামাদের ছেলে রুবেল রানা (২৮), কুড়িগ্রামের রাজার হাট উপজেলার রতিল গ্রামের আব্দুল বাতেনের ছেলে আশরাফ আলী (৫৪), রংপুররের কোতয়ালী উপজেলার ধাপকেল্লা বন্দর গ্রামের ইমদাদুল হকের ছেলে খাদেমুল ইসলাম (৩৭), মুন্সিগঞ্জর টুংগীবাড়ী উপজেলার দ্বিপারা গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে শাহিন দেওয়ান(৫২)।
শিল্প পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় অবস্থিত মাহামুদ জিনস লিমিটেডে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। বিভিন্ন সংকটের জন্য গত ৯ অক্টোবর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। পাশাপাশি কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক, বিজিএমইএ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করে ২৮ নভেম্বর শ্রমিকদের বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধের কথা বলা হয়। সেই অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কারখানাটির সামনে আসতে থাকেন শ্রমিকেরা। কিন্তু এর মধ্যেই পাওনা পরিশোধ করা হবে না জানিয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে কারখানার সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাঁরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিক আন্দোলনের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে মালিকপক্ষ কারখানাটির সামনে এসে শ্রমিকদের সঙ্গে বকেয়া বেতনের বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকেরা মালিকপক্ষের লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর ইটপাটকে নিক্ষেপ করেন। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে সরে যান। পরে শ্রমিকেরা মালিকপক্ষের লোকজনকে কারখানাটির ভেতরে অবরুদ্ধ করেন। তখন কারখানার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফি মাহমুদ উত্তেজিত শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে নিজেই তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা তাঁর ওপর হামলা চালান। শ্রমিকদের পিটুনিতে তিনি গুরুতর আহত হন। রাত ৮ টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. যোবায়ের বলেন, ওই ঘটনায় কালিয়াকৈর উপজেলার মাহমুদ জিনস ও মাহমুদ ডেনিম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচলক রাফি মাহমুদ বাদি হয়ে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামী করা হয়। পরে রাতেই কালিয়াকৈর থানা পুলিশ অভিযান শুরু করে। অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কালিয়াকৈর থানার সেকেন্ড অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুল ইসলাম বলেন, অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের সকালেই কারাগারের মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়েছে।